সালমান ফারসি (রাঃ) মূলত পারস্য (বর্তমান ইরান) এর ইসফাহান অঞ্চলের জী (Jay) নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল রূযবেহ (روزبه)। তিনি এক ধনী ও প্রভাবশালী অগ্নিপূজক (Zoroastrian) পরিবারের সন্তান ছিলেন।
তাঁর বাবা ছিলেন মজদেহ (অগ্নি-উপাসক) ধর্মে খুবই পরিপালনকারী এবং সালমান (রাঃ)–কে ধর্মের পূর্ণ দায়িত্বে নিযুক্ত করেছিলেন।
আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
🔥 অগ্নিপূজক ধর্ম ত্যাগ
একবার তাঁর বাবা তাঁকে বাগান পাহারা দিতে পাঠান। পথে তিনি এক গির্জায় খ্রিস্টানদের উপাসনা দেখতে পান এবং তা তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি বুঝতে পারেন, খ্রিস্টধর্ম সত্যের কাছাকাছি। পরে তিনি নিজ শহর ছেড়ে খ্রিস্টান পণ্ডিতদের অনুসরণ করতে থাকেন।
🌍 সত্যের সন্ধানে যাত্রা
সালমান (রাঃ) খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এক পণ্ডিত থেকে আরেক পণ্ডিতের নিকট জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন। বিভিন্ন পাদরিদের সেবা করে তিনি খ্রিস্টীয় শিক্ষায় অগ্রসর হন, কিন্তু যখন তাঁর শেষ পণ্ডিত মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে, তখন তিনি বলেন যে, “এখন আর পৃথিবীতে কেউ নেই যিনি সত্য ধর্ম অনুসরণ করেন – তবে একটি নবী আসবেন, যিনি আরব দেশে উদিত হবেন।”
এই কথা শুনে সালমান (রাঃ) তাঁর আগমনের অপেক্ষায় আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
🏜️ দাসত্ব ও মদিনা আগমন
অভাগ্যবশত, আরব ভ্রমণের পথে একদল লোক তাকে প্রতারণা করে দাস বানিয়ে বিক্রি করে দেয়। শেষে তিনি মদিনা শহরের এক ইহুদি মালিকের কাছে বিক্রি হন।
🌙 নবী (সাঃ) এর আগমন ও সাক্ষাৎ
যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসেন, সালমান (রাঃ) কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে তিনিই সেই প্রতিশ্রুত নবী। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন:
- নবী (সাঃ) সদকা খান না।
- হাদিয়া (উপহার) গ্রহণ করেন।
- তাঁর কাঁধে নবুয়তের মোহর রয়েছে।
সব পরীক্ষায় নবী (সাঃ) উত্তীর্ণ হলে তিনি আনন্দে অশ্রুসিক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
🔗 দাসত্ব থেকে মুক্তি
নবী (সাঃ) নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাঁর দাসত্ব থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেন। তাঁর মালিককে ৩০০ খর্জুর গাছ এবং ৪০ ওকিয়া স্বর্ণ দেওয়ার চুক্তি হয়। সাহাবিদের সহযোগিতায় এই চুক্তি পূরণ করা হয় এবং তিনি মুক্ত হন।
⚔️ কন্দক যুদ্ধ ও সালমান (রাঃ) এর ভূমিকা
খন্দক (পরিখা) যুদ্ধ–এর সময় সালমান (রাঃ) পরামর্শ দেন মদিনার চারপাশে পরিখা খননের, যা ছিল পারস্যে প্রচলিত একটি যুদ্ধ কৌশল। রাসূল (সাঃ) তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করেন এবং এই যুদ্ধের রণকৌশলে সালমান (রাঃ) অমূল্য ভূমিকা রাখেন।
রাসূল (সাঃ) বলেন:
"سَلْمَانُ مِنَّا أَهْلَ الْبَيْتِ"
“সালমান আমাদের আহলুল বাইত (পরিবারভুক্ত)।”
— (ইবন মাজাহ, হাদিস: 156)
🌹 মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
সালমান ফারসি (রাঃ) বহু বছর ইরাকের মাদাইন শহরের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুনিয়াবি সম্পদে আসক্ত ছিলেন না। তাঁর মৃত্যুর সময় তাঁর সম্পত্তি ছিল খুবই সামান্য। তিনি মৃত্যুবরণ করেন হিজরি ৩৫ সালে (প্রায় ৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে)।
✨ সালমান ফারসি (রাঃ) এর জীবন থেকে শিক্ষা:
- সত্যের সন্ধানে দৃঢ়তা – তিনি কখনও থেমে যাননি।
- ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও অনুসন্ধানপ্রবণতা
- উদ্ভাবনী বুদ্ধিমত্তা – খন্দক যুদ্ধের কৌশল।
- নম্রতা ও দানশীলতা – ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সাধাসিধে জীবনযাপন।
0 Comments